Samakal News Details

back

প্রযুক্তির এই যুগে পিছিয়ে নেই কেউ। জীবনযাত্রাকে প্রতিনিয়ত আরও সহজ করে তোলার লক্ষ্যে নতুনের সন্ধানে ছুটছে বিজ্ঞান। যেখানেই সমস্যা, সেখানেই সমাধানের পথ খুঁজছে তরুণ প্রজন্ম। উদ্ভাবনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম। দক্ষ উপদেষ্টা ও মেন্টরদের সার্বিক দিকনির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে এই ফোরাম। পথচলার মাত্র অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের কাছে এক স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এই ইনোভেশন ফোরাম।
নাসা স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন থেকে শুরু করে বিগ ডেটা-অ্যানালাইটিকস, ইনোভেশন ক্যাম্প, ইনোভেটরস হাব, আইওটি কনফারেন্স, স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেনসহ নানা ধরনের উদ্ভাবনীমূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে এই সংগঠনটি।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক আয়োজনের মধ্যে স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন ছিল স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা ও আয়োজন। ৩৬ ঘণ্টার এই হ্যাকাথন পরিচালনায় সহায়তা করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, নাসার সহযোগী প্রতিষ্ঠান 'সেকেন্ড মিউজ' (ঝবপড়হফ গঁংব)। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হলেও, এর আগে বিশ্বের ৫টি দেশ আন্তর্জাতিক এই হ্যাকাথনের আয়োজন করেছে।

স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাসহ পৃথিবীতে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান ও গবেষণামূলক কাজে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনটি ভিন্ন বিভাগে প্রথম-চতুর্থ শ্রেণি, পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণি এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বাংলাদেশের সব স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
মহাকাশ সংক্রান্তসহ পৃথিবীতে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আইডিয়া প্রজেক্ট জমা নেওয়া হয় এখানে। পরে অভিজ্ঞ মেন্টর প্যানেলের সিদ্ধান্তে ৩৫টি দল স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন বাংলাদেশের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
৩৬ ঘণ্টার আন্তর্জাতিক এই হ্যাকাথনে ৩৫টি প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত হ্যাকাথন অনুষ্ঠিত হয়। আর বিজয়ী প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের 'সার্চ বট', উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের 'ফ্লোটিং সিটি', রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের 'অক্সোমাস্ক' ও ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের 'ইকো ফ্রেন্ডলি সোর্স অব ইলেকট্রিসিটি এনার্জি।'
সর্বশেষ চূড়ান্ত বিজয়ীদের স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন, সেকেন্ড মিউজের ওয়াশিংটন ডিসির প্রধান কার্যালয় থেকে সার্টিফিকেট এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের যাত্রা আর শুরুর গল্পটা নিয়ে এর প্রধান উদ্যোক্তা আরিফুল হাসান অপু জানান, বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁকটা তার শুরু থেকেই। ছোটবেলা থেকেই স্কুল-কলেজ এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আয়োজিত বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় 'ছায়াপথ বিজ্ঞান ক্লাব'-এর সৃষ্টি, যার ৫৫টা শাখা এক সময় কাজ করেছিল দেশব্যাপী। বিজ্ঞান ক্লাব করতে গিয়ে তিনি সংগঠন করার একটা আগ্রহ পান। শুধু নিজের জন্য নয়, বরং অন্যদের সঙ্গে নিয়ে নতুন একটা উদ্ভাবনী প্ল্যাটফর্ম করার চিন্তা করেন। তার ধারাবাহিকতায় পরে বেসিসের পরিচালক থাকাকালীন তিনি বেসিস স্টুডেন্ট ফোরামের কনভেনরের দায়িত্ব পান, যা তরুণদের নিয়ে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তিনি 'নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ'-এর আহ্বায়ক হিসেবে গত তিন বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং এসব কিছুর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের যাত্রা শুরু।

বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের কার্যক্রম : বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকলেও মূলত ৩টা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। প্রথমত নতুন উদ্ভাবনের জন্য নতুন উদ্ভাবকদের সঙ্গে দক্ষ মেন্টরদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে মিটিং ও পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, তাদের উদ্ভাবনকে বাণিজ্যিকীকরণে যাবতীয় এন্টারপ্রাইজ সাপোর্ট দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদান এবং ভালো উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

আরিফুল হাসান অপু বলেন, 'আমরা আসলে ইনোভেশন কালচার তৈরি করার জন্য কাজ করছি। যার ফলে উদ্ভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্কশপ-সেমিনার আয়োজন করছি, যাতে তারা নতুন নতুন উদ্ভাবনের চিন্তা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোনো ধরনের ইনোভেশন সেটা টেকনিক্যাল কিংবা ননটেকনিক্যাল- সেটাকে ম্যাচিউর করার জন্য যাবতীয় সাহায্য প্রদান করা।

বিগত বছরের বিভিন্ন কার্যক্রম : শুরুটা হয়েছিল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ইনোভেশন ক্যাম্প থেকে যেখানে সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেছেল। পরে দেশব্যাপী ৪৫টার বেশি ওয়ার্কশপ, সেমিনার এবং বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স করেছে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ইনোভেশন ক্যাম্প। আইওটি কনফারেন্স, বিগ ডেটা, রোবটিক্স ইত্যাদি।

'নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ', যা শিক্ষার্থীদের গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সরাসরি নাসার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই ইন্টারন্যাশনাল হ্যাকাথনে পরপর তিন বছর বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। এ বছর বাংলাদেশের দুটি প্রজেক্ট সারা বিশ্বের মধ্যে পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে টপ ফাইভে ছিল, একই সঙ্গে জেনারেল ক্যাটাগরিতে সারাবিশ্বে ২২০টি শহরের মধ্যে ১২০টি নমিনেশন পেয়েছে। ১২০টির মধ্যে বাংলাদেশের প্রজেক্ট আছে ৬টি, যা কি-না আগে ছিল না। আর এই নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার সার্বিক দায়িত্ব বেসিসের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম।

নাসার আমন্ত্রণে নাসার হেড কোয়ার্টার ওয়াশিংটন ডিসি পরিদর্শনে যান আরিফুল হাসান অপু। এ সময় আরও দু'জন প্রতিনিধি তার সফরসঙ্গী ছিলেন। আরিফুল হাসান অপু বলেন, 'নাসার প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটন ডিসিতে। তাদের সঙ্গে মিটিং করি আমরা। সেই মিটিংয়ে আমরা মূলত দেশের তরুণ প্রজন্মকে নাসার সঙ্গে কীভাবে আরও বেশি যুক্ত করা যায়, তাদের উদ্ভাবন, নাসার ইন্টার্নশিপ ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এবং আমরা আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি নাসার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাব।

বর্তমান কার্যক্রম : বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে অতি সম্প্রতি একটা বড় আয়োজন নিয়ে আসছে বিজনেস ইনোভেশন সামিট। এতদিন বেশিরভাগ টেক ইভেন্ট করার পর এবারই তারা প্রথম বড় পরিসরে বিজনেস ইনোভেশন সামিটের আয়োজন করছে, যা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের জন্য। এ সামিটের প্রথম অংশগ্রহণকারী হিসেবে ধরা হচ্ছে তাদের, যাদের ইচ্ছা আছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বড় বড় পদে কাজ করার, অথবা যারা উদ্যোক্তা হতে চায়। এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব নানা বিষয় তুলে ধরবেন। নতুন কোনো ব্যবসা পরিচালনা থেকে শুরু করে সব ধরনের দরকারি বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করা হবে। বিজনেস ইনোভেশন সামিট অনুষ্ঠিত হবে ৫ আগস্ট ২০১৭-এ। একই সঙ্গে এই সামিটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম একটা বিজনেস ইনোভেশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। সেখানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেরা তিনটি দলকে নির্বাচন করা হবে, যাদের মেন্টরিং সাপোর্ট থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সাহায্যও করা হবে।