Samakal News Details

back

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার উদ্যোগে গত শুক্র ও শনিবার বিশ্বের ১১৭টি দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় 'নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাটির বাংলাদেশ পর্ব আয়োজন করে বেসিস। এতে কারিগরি বিভাগে বিজয়ী ছয় অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে লিখেছেন ইমদাদুল হক

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার আয়োজনে গত ২২-২৩ এপ্রিল বিশ্বের ১১৭ দেশের ২০০টি অঞ্চল থেকে ৪৪০ দল অংশ নেয় 'নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্চ' শীর্ষক উদ্ভাবনি প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতাটির বাংলাদেশ পর্ব আয়োজন করে বেসিস। রাজধানীর ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) ক্যাম্পাসে টানা ৩৬ ঘণ্টার আয়োজন শেষে গত শনিবার শেষ হয় প্রতিযোগিতার বাংলাদেশ পর্ব। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ চারজন থেকে সর্বনিম্ন দু'জনের দল গঠন করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। মহাকাশে নভোচারীদের নিরাপত্তা, আবহাওয়া, তথ্য ইত্যাদি সম্পর্কে আইডিয়া, অ্যাপস ও গেমের মাধ্যমে নানা সমাধান নিয়ে হাজির হন অংশগ্রহণকারীরা। বাংলাদেশ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ২০০ প্রতিযোগী ৫০টি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। চূড়ান্ত পর্বে নাসার বিচারকদের রায় পেতে এর মধ্য থেকে কারিগরি বিভাগে বাংলাদেশের তিন অঞ্চল থেকে উন্নীত হয় ৬টি দল। এ ছাড়া পরবর্তীতে পিপল চয়েজে বাংলাদেশ থেকে ৫টি প্রকল্প এবং মোস্ট ইনোভেশনে মোট ১৫টি দল টিকিট পেয়েছেন চূড়ান্ত পর্বে। ইতিমধ্যেই বিজয়ী দলগুলোর সোর্স কোড ও ভিডিও নাসায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসিস পরিচালক ও নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু। তিনি জানালেন, বছরের মধ্যভাগে চূড়ান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ায় দুটি কারিগরি দল, মোস্ট ইনোভেশন ক্যাটাগরিতে ৫টি প্রকল্প এবং ফেসবুক লাইকের ভিত্তিতে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করবে নাসা। শাটল উৎক্ষেপনের সময় বিজয়ীরা উপস্থিত থাকবেন।

কারিগরি বিভাগে চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হয়েছে ঢাকা অঞ্চলের উইনগার ও গার্ডিয়ান অব দ্য এয়ার, রাজশাহী অঞ্চলের মৈত্রী :দ্য ড্রোন এইডার ও ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই সিস্টেম এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ট্রাকইট ও প্রজেক্ট জেদ।

পথিককে রাস্তা চিনিয়ে দেবে উইনগার

গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে একটি পথ নকশা তৈরি করতে পারে বিজয়ী উইনগার দলের তৈরি অ্যাপটি। কেউ যদি অপরচিত কোনো রাস্তায় চলতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন, তবে তিনি সহজেই পকেটে থাকা মুঠোফোনটিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পথ নকশা দেখে আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবেন। বিজয়ী দল উইনগার দলনেতা নজরুল ইসলাম অনিক জানালেন, বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের চার সহপাঠী মিলে এই অ্যাপটি তৈরি করেছেন তারা। এই অ্যাপ তৈরিতে তার সতীর্থরা হলেন লিংকন সরকার, অঞ্জন বসাক তন্ময় ও রায়হান চৌধুরী। আর এতে মেন্টর ছিলেন বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র উৎস খান।

পরিবেশ-প্রতিবেশ অভিভাবক

ব্যবহারকারীকে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ধুলার পরিমাণ, বাতাসের দূষণ, অ্যালার্জি সমস্যা, মহামারী ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য দেবে নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জের এয়ারচেক বিভাগের বিজয়ী অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ গার্ডিয়ান অব দ্য এয়ার। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির টিম ডিসাইফার দলনেতা রাকিন সরদারের সঙ্গে অ্যাপটি ডেভেলপ করেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানুল বাসার ফাহিম, নূরুল হক পিয়াস ও রায়হান সরদার টিপু। রাকিন জানান, অ্যাপটির মাধ্যমে মুঠোফোন থেকেই নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

ড্রোনের নিরাপত্তায় মৈত্রী

আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে আকাশে বাতাসের চাপ, জলীয়বাষ্প, তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে ড্রোন যেন আপনা থেকেই নিরাপদে চলাচল করতে পারে তারই একটি সমাধান দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল মৈত্রী। তারা ডেভেলপ করেছে 'মৈত্রী : দ্য ড্রোন এইডার' নামের উইন্ডোজ অ্যাপ। মৈত্রী দলনেতা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের উজ্জ্বল পোদ্দার জানালেন, অ্যাপটিনো ফ্লাই জোন সম্পর্কে ড্রোনকে আগে থেকেই সতর্ক করে তার গতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। পাশাপাশি অ্যাপটি ড্রোনের অভ্যন্তরীণ ঝাঁকুনি বিশ্লেষণ করে চলাচলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারে। এটি তৈরি করতে তার সঙ্গী ছিলেন সহপাঠী ফাহিম শিকদার ও তানভীর হাসান।

ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই সিস্টেম

পানির প্রয়োজন ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করে ব্যবহারকারী প্রয়োজনীয় তথ্য দেবে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ের অ্যাপ নির্মাতা দল 'সোলারিস নাইট'। দলনেতা সাকিফ আশরাফ জানালেন, পানির ট্যাঙ্কে ব্যবহৃত সেন্সর থেকে তাদের অ্যাপটি ব্যবহারকারীকে ট্যাঙ্কি পূর্ণ হয়ে যাওয়া এবং পানির প্রাপ্যতা সম্পর্কে অবহিত করবে। একই সঙ্গে চাষাবাদেও মাঠে পানি সেচে অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে। এই অ্যাপ নির্মাতা দলের অপর সদস্যরা হলেন- আবদুল্লাহ আল জাবির, মুজিবুর মুজিব ও মাহফুজ সজীব।

আবহাওয়া বার্তা জানাবে ট্রাকইট

মুঠোফোনে আবহাওয়া বার্তা জানাতে ট্রাকইট অ্যাপ। এই ওয়েব অ্যাপটি ডেভেলপ করেছে ইউএসটিসি চট্টগ্রাম অষ্টম সেমিস্টারের দুই সহপাঠী নাসরুল আকিব ও খালেদ মাসুদ। আকিব জানান, মেঘের ধরন বুঝে বৃষ্টি হবে কিনা জানাতে পারবে তাদের তৈরি অ্যাপটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক বাকী বিল্লাহর তত্ত্বাবধানে তারা অ্যাপটি তৈরি করেছেন।

ই-মোবাইল প্যাস্টোরালিজম

ই-মোবাইল প্যাস্টোরালিজম নামের ওয়েব অ্যাপটি তথ্যগত সেবা দেবে, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রোগবালাই সম্পর্কেও জানা যাবে। দূরচিকিৎসা পদ্ধতিতে জরুরি চিকিৎসাসেবাও দিতে সক্ষম হবে অ্যাপটি। চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি সিইসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র প্রকল্প জেড দলনেতা নাবিল নাসিফুর রহমান। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সজীব দাসগুপ্তের তত্ত্বাবধানে অ্যাপ্লিকেশনটি ডেভেলপ করতে তার সঙ্গী ছিলেন সহপাঠী কাঁকন বড়ূয়া, জয় রাম সেনগুপ্ত ও সাদমান সাকিব।